বাঙালির মিষ্টি না হলে চলেই না! মিষ্টিমুখ বলে একটা কথা আছে না! মিষ্টি ঠিক যেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। বেশিরভাগ জেলারতেই জনপ্রিয় কিছু মিষ্টি রয়েছে। এরমধ্যে কয়েক প্রকার মিষ্টির খবর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে। তেমন কয়েকটি মিষ্টি নিয়ে আমাদের এই আয়োজন-
নাটোরের কাঁচাগোল্লা: নাটোর গিয়ে সেখানকার বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা না খেয়ে আসেন না বেশিরভাগ মানুষ। শুধু দেশেই নয়, এই মিষ্টির সুনাম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি কিন্তু গোল নয় আবার কাঁচাও নয়! তবুও নাম কাঁচাগোল্লা তার। খাঁটি দুধের ছানা ও চিনি কাঁচাগোল্লার প্রধান উপাদান। ১ কেজি কাঁচাগোল্লা তৈরিতে প্রায় এক কেজি কাঁচা ছানা এবং ৪০০-৫০০ গ্রাম চিনির দরকার পড়ে। এই মিষ্টিতে কাঁচা ছানার মতো গন্ধ পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো মিষ্টিতে পাওয়া যায় না।
টাঙ্গাইলের চমচম: এই মিষ্টির নাম জানেন না, এমন মানুষের সংখ্যা দেশে খুবই কম। ব্রিটিশ আমলেও এ চমচমের স্বাদ গোটা উপমহাদেশেই বিখ্যাত ছিল। এখনো তেমনি বিখ্যাত। ধারণা করা হয় যশোর হালই নামের মিষ্টির এক কারিগর এ চমচমের স্রষ্টা। এ চমচমগুলো সাধারণত লালচে রঙের যার উপড়িভাগে চিনির গুড়ো থাকে। আর ভেতরের অংশ অনেক রসালো আর নরম। চমচমের গুণগত মান আর স্বাদ মূলত পানি আর দুধের অনুপাতের ওপরই নির্ভর করে।
নওগাঁর প্যারা সন্দেশ: নওগাঁর প্যারা সন্দেশের সুখ্যাতিও এখন বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশে পৌঁছেছে। এই সন্দেশ যারা তৈরি করেন তারা সুস্পষ্টভাবে বলতে পারেননি ঠিক কখন থেকে নওগাঁর ‘প্যারা’ সন্দেশের প্রচলন শুরু হয়েছে। এটি তৈরির সময় তরল দুধের সাথে চিনি মিশিয়ে তা ভালোভাবে জ্বাল করে ক্ষীর তৈরি করা হয়। ক্ষীর যখন জড়িয়ে আসতে শুরু করে তখন গরম ক্ষীর দুই হাতের তালুর মাঝে সামান্য চাপ দিতে হয়। এভাবেই তৈরি করা হয় প্যারা সন্দেশ। এর রঙ হালকা খয়েরি রঙের। এ সন্দেশগুলো প্রস্থে প্রায় ১/২ ইঞ্চি আর লম্বায় ২ ইঞ্চি হয়ে থাকে। ১ কেজি প্যারা সন্দেশ তৈরি করার জন্য প্রয়োজন পড়ে ৭ লিটার দুধ। এ মিষ্টির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এতে দুধ আর চিনি ছাড়া অন্য কোনো উপকরণ ব্যবহার করা হয় না।
কুষ্টিয়ার চমচম: কুষ্টিয়ার ঔহিত্যবাহী মিষ্টির স্পেশাল চমচম। স্বাদে ও সুবাসে মৌ মৌ করে। মন ভরিয়ে দিতে জুড়ি নেই। প্রাচীনকাল থেকে কুষ্টিয়া মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। এখানকার ময়রারা যে বিশেষ চমচম বানান তার সুনাম দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও।
কুমিল্লার রসমালাই: রসমলাই মানেই কুমিল্লার পুরাতন মাতৃভান্ডার। প্রতিষ্ঠানটির খ্যাতি দেশজুড়ে। নগরীর মনোহরপুর এলাকায় অবস্থিত মাতৃভান্ডার প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা ভিড় করেন। একটি পাতিল বা কড়াইয়ে ১ মণ দুধ প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে জ্বাল দিয়ে ঘন করে ১৩-১৪ কেজি ক্ষীর তৈরি করা হয়। এ দুধ থেকে পাওয়া ছানার সঙ্গে কিছু ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট রসগোল্লা রসগোল্লা তৈরি করা হয়। প্রথমদিকে কুমিল্লার রসমালাইয়ের নাম ছিল ক্ষীরভোগ। তখন মাটির হাঁড়িতে বিক্রি হতো এ মিষ্টি। পাকিস্তান আমলে অবাঙ্গালিরা এসে এ ক্ষীরভোগকে রসমালাই বলতে শুরু করে। সেখান থেকেই এ নাম প্রসিদ্ধ হয়ে যায়।
নেত্রকোণার বালিশ মিষ্টি: নেত্রকোণা শহরের বারহাট্টা রোডের গয়ানাথের ‘বালিশ’ মিষ্টির বেশ সুনাম রয়েছে। বালিশ মিষ্টির প্রথম রূপকার হিসেবে দেশজুড়ে পরিচিতি পান গয়ানাথ ঘোষ। এ মিষ্টি তৈরি হয় দুধ, ছানা, চিনি আর ময়দা দিয়ে। প্রথমে দুধের ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মন্ডের মতো প্রস্তুত করা হয়। এরপর সেই মন্ড থেকে তৈরি করা হয় বিভিন্ন সাইজের বালিশ যা পরে চিনির গরম রসে ভাজা হয়। এরপর ঠাণ্ডা করে চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় বেশ কিছুক্ষণ।
মুক্তাগাছার মন্ডা: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মন্ডাও অনেক বিখ্যাত। আর অন্যন্য বিখ্যাত মিষ্টির মতোই এটি নিয়েও অনেক কিংবদন্তি চালু রয়েছে। একটি কিংবদন্তী এমন যে, ২০০ বছর আগে মুক্তাগাছার গোপাল পাল নামক এক মিষ্টি প্রস্তুতকারক নাকি স্বপ্নের মাধ্যমে এক ঋষির কাছ থেকে এ মন্ডা মিষ্টি তৈরির আদেশ পেয়েছিলেন। এ সাধুই নাকি তাকে এ মন্ডা মিষ্টি তৈরির কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিলেন। যতদূর জানা যায় প্রথম মন্ডা মিষ্টি তৈরি হয় বাংলা ১২৩১ সালে। মন্ডার মূল উপাদান দুধ ও চিনি। এ মিষ্টি সাদা কাগজে মোড়ানো থাকে। মিষ্টিটি নরম এবং শুকনো।